আধুনিকতার ছোঁয়ায় প্রায় সবাই এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় যুক্ত। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোর সঙ্গে কম-বেশি সকলেই পরিচিত। প্ল্যাটফর্মগুলোয় অধিকাংশ ব্যবহারকারীরই রিলস ও ভিডিও দেখার অভ্যাস রয়েছে। এরমধ্যে তরুণ ও মধ্যবয়সী মানুষের সংখ্যা বলা যায় উল্লেখযোগ্য।
তাৎক্ষণিক বিনোদন পাওয়ার জন্য রাতে ঘুমানোর আগে শুয়ে শুয়ে রিলস বা শর্টস ভিডিও দেখা অনেকেরই অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক স্টাডিতে রিলস দেখা মানুষের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ বিকাশের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। এবার তাহলে রাতে রিলস দেখার প্রভাব সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
রাতে স্ক্রিন টাইম ও রক্তচাপের ঝুঁকির মধ্যে সংশ্লিষ্টতা: এক গবেষণায় ৪ হাজার ৩১৮ চীনা নাগরিককে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। তারা সবাই তরুণ ও মধ্যবয়সী ছিলেন। গবেষণার লক্ষ্য ছিল, ঘুমানোর সময় স্ক্রিনে সময় ব্যয় করা এবং অংশগ্রহণকারীদের রক্তচাপের মাত্রা, বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপের পরিবর্তনের মধ্যে নির্দিষ্ট কোনো সম্পর্ক বিদ্যমান কিনা তা নির্ধারণ করা।
গবেষণায় তুলে ধরা হয়েছে, ঘুমের আগে রিলস বা শর্টস ভিডিও দেখা উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিতে ফেলে। যা ভয়াবহ। কেননা, এটি স্পষ্ট যে স্ক্রিনে সময় ব্যয় থেকে দেরিতে ঘুমানোর অভ্যাস হৃদরোগের জন্য লক্ষণ হিসেবে কাজ করে। বিশেষ করে বর্তমান তরুণ প্রজন্মের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রে।
ভারতের বেঙ্গালুরুর হদরোগ বিশেষজ্ঞ ড. দীপক কৃষ্ণমূর্তি এ ব্যাপারে বলেন, ছোট ভিডিওর প্রতি আসক্তি কেবল উল্লেখযোগ্য সমস্যাই তৈরি করে না। বরং রক্তচাপ বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে। এসবের ক্ষতির কারণে রিলস ও শর্টস ভিডিওর প্ল্যাটফর্মগুলো থেকে নিজেকে দূরে থাকারও পরামর্শ দিয়েছেন এই বিশেষজ্ঞ।
উচ্চ রক্তচাপের ওপর রিলস-শর্টস ভিডিওর প্রভাব: ঘুমানোর আগে রিলস ও শর্টস দেখার সঙ্গে সাধারণ স্ক্রিন টাইম আলাদা। টেলিভিশন দেখা, ভিডিও গেম খেলা বা কম্পিউটারে কাজ করার মতো স্ক্রিন টাইমে অল্প পরিমাণ শারীরিক কার্যকলাপ প্রয়োজন হয়। একজন ব্যক্তি টেলিভিশন দেখার সময় নড়াচড়া করতে পারেন।
এদিকে রিলস-শর্টস ভিডিও দেখার সময় বসে থাকা হয়। গবেষণায় তুলে ধরা হয়েছে যে, গভীর রাতে এসব ভিডিও দেখার সঙ্গে শারীরিক আচরণ নিস্ক্রিয়। এ জন্য শারীরিক নড়াচড়া কম হয় এবং এ জন্য উচ্চ রক্তচাপের মতো স্বাস্থ্যজনিত জটিলতা আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
গবেষকদের পরামর্শ: হেবেই মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেংদে লি, ফাংফাং মা, শাংইউ লিউ, লে ওয়াং, লিশুয়াং জি, মিংকি ঝেং এবং গ্যাং লিউ’র সমন্বয়ে গঠিত গবেষক দল গবেষণার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে একাধিক পরামর্শ দিয়েছেন। সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে তরুণদের ঘুমাতে যাওয়ার আগে স্ক্রিন সময় সীমিত করার ব্যাপারে সচেতন থাকা উচিত বলে মনে করেন গেবেষকরা। এটি শুধু উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা কমাবে না, বরং তাদের ঘুমের স্বাস্থ্যবিধি ভালো করতেও ভূমিকা পালন করবে।
গবেষকরা উল্লেখ করেছেন, অতিরিক্ত কিছু স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অবশ্যই গ্রহণ করা উচিত। স্বাস্থ্যকর জীবনধারার মধ্যে নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপে অংশগ্রহণ, নিয়মমত স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও চাপ ব্যবস্থাপনা। যা আপনার উচ্চ রক্তচাপের সূত্রপাত কমাতে প্রভাব ফেলতে পারে।
খুলনা গেজেট/এএজে